‘সংকটের বছরে’ নতুন এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা
নতুন এডিপির আকার হবে ৩০ জুন শেষ হওয়া চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। তবে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।
আর্থিক সংকটের কারণে এবার সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ব্যাপক পরিমাণে কমানো হচ্ছে। আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন এডিপির আকার হবে ৩০ জুন শেষ হওয়া চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। তবে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।
চলতি অর্থ বছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ সংকটের কারণে পরে অবশ্য পরে তা কমিয়ে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী অর্থ বছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদর দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাজেটের দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ হচ্ছে রাজস্ব বাজেট এবং অপরটি হচ্ছে উন্নয়ন বাজেট। উন্নয়ন বাজেটই হচ্ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি।
রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রতিবছর যে ব্যয় ধরা হয় এবং সরকার বিভিন্ন ধরনের কর থেকে যে টাকা আদায় করে সেটিকে বলা হয় রাজস্ব বাজেট।
এছাড়া অবকাঠামোসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যে ব্যয় ধরা হয় সেটিকে উন্নয়ন বাজেট বলা হয়। এই উন্নয়ন বাজেটের আকারই এবার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হবে না।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এর আগে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেছিলেন, “নানা কারণে আগামী বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। এডিপির আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে যেসব বড় প্রকল্প আছে, সেগুলোতে অর্থায়ন চলমান থাকবে।”
মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভায় অনুমোদিত ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপিতে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
আগামী এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প থাকবে। এবার অন্যবারের মতো এবারও পরিবহন ও যাতায়াত এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
কোন খাতে কত বরাদ্দ
নতুন এডিপিতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে। প্রায় সব খাতেই চলতি এডিপিতে বরাদ্দ কমেছে।
কমেন্ট