৬০ বছর বয়স হলেই পেনশনের জমার ৩০% টাকা তোলা যাবে
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান বলেন, “কেউ এককালীন ৩০ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন। কেউ যদি এককালীন এই টাকা নিতে না চান, তবে মাসিক পেনশনের পরিমাণ সংগত কারণে বেশি হবে।”
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বড় পরিবর্তন এনেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এখন থেকে পেনশন স্কিমে থাকা একজন চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স হলেই জমাকৃত অর্থের ৩০ শতাংশ টাকা এককালীন তুলে নিতে পারবেন। এত দিন এককালীন টাকা তোলার সুযোগ ছিল না।
বুধবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের দ্বিতীয় সভা অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পেনশন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ৬০ বছর বয়স হলেই এই পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতা ওই ব্যক্তি তার জমা করা টাকার ৩০ শতাংশ তুলে নিতে পারবেন। নিয়ম অনুসারে বাকি সুবিধাও বজায় থাকবে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান বলেন, “কেউ এককালীন ৩০ শতাংশ টাকা তুলে নিতে পারবেন। কেউ যদি এককালীন এই টাকা নিতে না চান, তবে মাসিক পেনশনের পরিমাণ সংগত কারণে বেশি হবে।”
বুধবারের সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—
>> একজন চাঁদাদাতা পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পর আগ্রহী হলে তাকে তার মোট জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ অর্থ এককালীন আর্থিক সুবিধা হিসেবে প্রদানের সুযোগ রাখা হবে।
>> প্রবাস ও প্রগতি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী অনেকের মাসিক আয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় এ দুটি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার হার দুই হাজার টাকার পরিবর্তে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
>> প্রগতি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি অংশের মাসিক আয় বেসরকারি খাতের কর্মকর্তাদের গড় মাসিক আয়ের তুলনায় বেশি হওয়ায় মাসিক সর্বোচ্চ জমার পরিমাণ ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
>> আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা চুক্তির আওতায় নিয়োজিত সেবাকর্মীদের প্রগতি পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
>> জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএসএ) সদস্যপদ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এবং
>> সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালুর বিষয়টি পরীক্ষা করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। তখন অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ ছিল, প্রস্তুতি না সেরেই ভোটের আগে জনগণকে তুষ্ট করতে তড়িঘড়ি করে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়।
প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা- এই চার স্কিম চালু করা হয়। এক বছর পর গত বছরের ১ জুলাই থেকে প্রত্যয় স্কিম চালু হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও বিধিবদ্ধ সংস্থার চাকরিজীবীদের জন্য।
জুলাইয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে। তার মধ্যে প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও ধর্মঘট শুরু করে।
আন্দোলনে দিশেহারা অবস্থায় গত ৪ আগস্ট প্রত্যয় পেনশন স্কিমই বাতিলের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। পরদিন সরকারেরও পতন ঘটে।
এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগও নিয়েছে এই সরকার। ফলে পেনশন স্কিম চালু থাকবে কি না, তা নিয়েও দেখা দেয় সংশয়।
তবে পেনশন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রত্যয় বাতিল হলেও বাকি চারটি পেনশন স্কিম চালু থাকবে। আপাতত নতুন কোনও স্কিম নেওয়া হচ্ছে না।
কমেন্ট